ফরিদ
হাসান,যবিপ্রবিঃ
নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সহকর্মীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী,সরকারি -বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গবেষণা বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে
সকলের মাঝে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষেদের ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উত্তম গোলদার।বিশ্বের খ্যাতনামা গবেষণাপত্র
প্রকাশনী জার্নাল যেমনঃ স্কোপাস ইনডেক্স, ওয়েব অফ সায়েন্স ইনডেস্ক, এলসেভিয়ার জার্নাল,
ব্যবসায় শিক্ষায় বিশ্বে বিশেষভাবে স্বীকৃত এবিডিসি (অস্ট্রেলিয়ান
বিজনেস ডিনস কাউন্সিল) ইনডেক্সিংসহ বিভিন্ন জার্নালে এখন পর্যন্ত তাঁর নিজের দশটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে তাঁর
১৪ টি গবেষণাপত্র প্রকাশের
কাজ চলমান যেগুলোর কোনটি প্রকাশের অপেক্ষায়, কোনটি শুরু বা মাঝের পর্যায়ে
রয়েছে। বর্তমানে এই শিক্ষক শিক্ষাছুটি
নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণারত আছেন। তিনি মূলত ফিন্যান্সশিয়াল
টেকনোলজি নিয়ে গবেষণা করছেন। গবেষক ও প্রশিক্ষক যবিপ্রবি
শিক্ষক উত্তম গোলদারের বিশেষ
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন যবিপ্রবি প্রতিনিধি মোঃ ফরিদ হাসান।
1.গবেষণা বিষয়ে অন্যদেরকে প্রশিক্ষণ
দেওয়ার বিষয়টি কবে আপনার মাথায় আসে?
উত্তম
গোলদারঃ 'হোসেইন একাডেমী ডেটা এনালাইসিস ' নামক একটি ফেসবুক গ্রুপ যেটি ব্যবসায় শিক্ষা কমিউনিটির জন্য বেশ ভালো একটা গবেষণা প্ল্যাটফর্ম ও এটি বাংলাদেশের
একজন প্রফেসর পরিচালনা করেন।তিনি এখন অস্ট্রেলিয়ায় একজন প্রফেসর হিসেবে কর্মরত
আছেন।এখান থেকে বেসিক গবেষণা জ্ঞান রপ্ত করার পর উক্ত
প্ল্যাটফর্ম থেকে আমি
তিন-চারটা ডিসটেন্স লার্নিং প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করি (জুম অ্যাপের মাধ্যমে)। মূলত আমি
সেকেন্ডারি ডেটা অ্যানালাইসিস নিয়ে
কাজ করি ও আমার ইকোনোমেট্রিক্স
বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা অর্জন
করি। আমার বিভাগের জুনিয়র সহকর্মীদের সাথে কোলাবোরেশনের মাধ্যমে গবেষণা এর কাজ করতে গিয়ে আমার জানা বিষয়গুলো তাদেরকে শেখাতে চেষ্টা করি। কয়েকজন সহকর্মী আমাকে বলেন আমরা পুরোপুরি বিষয়গুলো ফর্মালি শিখতে চাই। কেউ কেউ আমাকে অনুপ্রাণিত করেন সবাইকে শেখানোর
জন্য একটা প্লাটফর্ম করার জন্য । তখন ট্রায়াল
হিসেবে আমি 'রিসার্চ ট্রেনিং ইন বাংলা 'নামে
ফেসবুক গ্রুপ খোলার মাধ্যমে গবেষণা বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক
শ্রেণীর কাছ থেকে আমি বেশি সাড়া পাই। এভাবেই মূলত আমার গবেষণা প্রশিক্ষণ
দেয়ার বিষয়টির সূত্রপাত ঘটে। এই গ্রুপের মাধ্যমে
জুম লিংক শেয়ার করে অনলাইনে গবেষণা বিষয়ক ক্লাস নেয়া শুরু করি।দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে যেকোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছেন এমন যেকোন শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা গবেষণা শুরু
করতে চান এমন যেকেউ চাইলেই আমার কোর্সগুলো করতে পারেন।তাছাড়া আমার পরবর্তী কার্যক্রম কি হবে তা
সম্পর্কে উক্ত ফেসবুক গ্রুপে আমি আপডেট শেয়ার করে থাকি।
2. কোন কোন শ্রেণির মানুষ মূলত আপনার গবেষণা বিষয়ক প্রশিক্ষণগুলো নিতে আগ্রহী?
উত্তম
গোলদারঃ এক.মূলত তিন
শ্রেণীর মানুষ আমার গবেষণা বিষয়ক প্রশিক্ষণগুলো
নিতে আগ্রহী বা নিয়েছেন। এক.
যারা মাস্টার্স বা পিএইচডি
ডিগ্রির জন্য বিদেশে যেতে চান তারা দুই.বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক
অর্থাৎ যারা শিক্ষকতা পেশায় ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে রয়েছেন তিন.সরকারি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
3.উচ্চশিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে বিদেশ গমনের তথ্য ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে
শিক্ষার্থীদেরকে অবগত করে এ পর্যন্ত কতজনকে
বিদেশে যেতে সাহায্য করেছেন?
উত্তম
গোলদারঃ আসলে যে সকল শিক্ষার্থী
বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চান তাদের অনেকেরই বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তেমন সুস্পষ্ট ধারণা নেই। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য আমি একটি পরিকল্পনা বা উদ্যোগ গ্রহণ
করেছি। সেটি হলো প্রতিমাসে বিভিন্ন দেশে উচ্চশিক্ষায় অধ্যয়নরত বা পিএইচডি গবেষণারত
রিসোর্স পার্সনদেরকে দিয়ে জুম অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইনে উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক দিকনির্দেশনা মূলক প্রোগ্রাম আয়োজন করা।
4. আপনার চলমান
কোর্সগুলো সম্পর্কে জানতে চাই?
উত্তম
গোলদারঃ আমার কোর্সগুলো মূলত ব্যবসায় শিক্ষা শাখা সংশ্লিষ্ট গবেষণা
কেন্দ্রিক। ব্যবসায় শিক্ষায় মূলত দুই ধরনের গবেষণা হয় এক.প্রাইমারি ডেটাবেজ
২. সেকেন্ডারি ডেটাবেজ।আমি মূলত সেকেন্ডারি ডেটাবেজ নিয়ে কাজ করি। আমার গবেষণার ফিল্ড হচ্ছে ইকোনোমেট্রিক্স।আমি ইকোনোমেট্রিক্স মডেলিং বিষয়ে গবেষণা ট্রেনিং দিয়ে থাকি। তিন ধরনের কোর্স আমি করিয়ে থাকিঃ ১।বেসিক ইকোনোম্যাট্রিক্স ২।টাইম সিরিজ এনালাইসিস
৩।প্যানেল ডেটা এনালাইসিস
5.আপনার কোর্সগুলো করতে কি কোন ফি
দিতে হয়?
উত্তম
গোলদারঃ হ্যাঁ।বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত দের থেকে ফি নেওয়া হয়।
যেহেতু তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল।কিন্তু যারা কোর্স ফি কমাতে বলেন
বা অপারগতা প্রকাশ করেন তাদের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে থাকি।শুধুমাত্র আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রিতে ১০ থেকে ১২
ঘন্টা ব্যাপী একটি গবেষণা প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যেটি হলো 'হাউ টু রাইট আ
রিসার্চ পেপার অ্যান্ড পাবলিশ'।আমার বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
খুব শীঘ্রই ইন্টার্নশিপে যাবে। তাদের জন্য মূলত এই কোর্সটি যেন
তারা কর্মক্ষেত্রে গিয়ে একটি গবেষণা পত্র কিভাবে লিখতে হয় এবং তা জার্নালে পাবলিশ
করতে হয় সে বিষয়ে সম্যক
ধারণা লাভ করতে পারে।
6. যবিপ্রবির বাইরের শিক্ষার্থীরা কি আপনার কোর্সগুলো
করতে পারেন?
উত্তম
গোলদারঃ হ্যাঁ, অবশ্যই করতে পারেন। আমার এখানে এখন পর্যন্ত সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী কোর্সগুলো সম্পন্ন করেছে। আমার সাথেও গবেষণা করেছে ও সেই গবেষণাপত্র
প্রকাশিত হয়েছে এমন শিক্ষার্থী ও রয়েছে।
7.আপনার বিভাগের গবেষণা কার্যক্রম সম্পর্কে বলুন?
উত্তম
গোলদারঃ আমার বিভাগে বর্তমানে মাস্টার্স প্রোগ্রামের এক বছরের কোর্সটিকে
দেড় বছর করা হয়েছে। এজন্য আমি যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড.মো. আনোয়ার
হোসেন স্যারকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই।মাস্টার্স প্রোগ্রামের প্রথম দুই সেমিস্টার একাডেমিক পড়াশোনা ও লাস্ট সেমিস্টারটি
শুধুমাত্র থিসিস সম্পন্ন
করার জন্য রাখা হয়েছে যা খুবই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত। অনেক বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ও এখনো এমন উদ্যোগ গ্রহণ
করতে পারেনি যেখানে
যবিপ্রবির মতো নবীন বিশ্ববিদ্যালয় তা করে দেখিয়েছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য মহোদয়, বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকবৃন্দ ও আমার বিভাগের
শিক্ষক বৃন্দের সার্বিক সহযোগিতায় আমার বিভাগটি বর্তমানে গবেষণায় অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আশা করি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আমার বিভাগটিও বিজ্ঞান বিভাগগুলোর গবেষণার মতো সমপর্যয়ের হবে।তবে আমি মনে করি মানবিক
বা ব্যবসায় শিক্ষা বিষয়ক গবেষণা আমাদের দেশে খুবই কম হয়েছে বেশিরভাগই
হয়েছে বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা। আসলে বিজ্ঞান গবেষণায় বাংলাদেশ এগিয়ে থাকলেও মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা
ক্ষেত্রে গবেষণায় অনেকটা পিছিয়ে আছে।
Comments
Post a Comment