দেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
(যবিপ্রবি) যেখানে বর্তমান বিশ্বে পেশার দিক দিয়ে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে চলা
ফিজিওথেরাপি বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।২০১৮-১৯ সেশনে ৫ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব
ফিজিওথেরাপি(বিপিটি) প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে শুরু হয়েছে ফিজিওথেরাপি
ও পুর্নবাসন বিভাগটির যাত্রা।বর্তমানে এ বিভাগটিতে স্নাতকের তিনটি ও স্নাতকোত্তরের
একটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত আছেন।অপরদিকে যবিপ্রবির বিশেষায়িত আরেকটি বিভাগ
নার্সিং এন্ড হেলথ সায়েন্স বিভাগ যেটি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তির
মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে।বর্তমানে এ বিভাগে স্নাতকের দুই ব্যাচের শিক্ষার্থীরা
অধ্যয়রত।
কেন ভর্তি হবেন যবিপ্রবির বিশেষায়িত এই বিভাগ দুটিতে?? চলুন তবে প্রথমে
জেনে নিই,ফিজিওথেরাপি কি এবং বাংলাদেশে এ পেশার জন্মের ইতিহাস!!!
ফিজিওথেরাপি হলো
ব্যথামুক্ত একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি।বাত ব্যথা,প্যারালাইসিস,হার্ট
ডিজিজ,স্ট্রোক,আঘাতজনিত ব্যথা,স্থূলতাসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের অন্যতম কার্যকরী
ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে ফিজিওথেরাপি।এটি স্বাস্থ্য বা চিকিৎসা বিজ্ঞানের
অত্যাধুনিক একটি বিশেষায়িত শাখা। মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমানের হাত ধরে ১৯৭২সালে স্বাধীন বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেশা শুরু
হয়। তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সুচিকিৎসায় বিদেশ থেকে ড. ভেলোরী-এ্যান-টেইলরসহ
বেশ কয়েকজন ফিজিওথেরাপিস্টদের বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। আরআইএইচডি তথা ঢাকা পঙ্গু
হাসপাতালে ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের অধীনে বঙ্গবন্ধু ৫ বছর
মেয়াদি ব্যচেলর অব ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু করেন। ১৯৭৫ সালে জাতির জনকের স্বপরিবারে
নারকীয় হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পেশার ব্যচেলর কোর্সটি বন্ধ করে
দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির জনকের কণ্যা তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ
হাসিনার নির্দেশে এবং সিআরপির প্রতিষ্ঠাতা ড. ভেলোরী এ্যান টেইলরের প্রচেষ্টায়
ফিজিওথেরাপির ব্যচেলর কোর্সটি পুনরায় পঙ্গু হাসপাতালে এবং বিএইচপিআই, সিআারপিতে
চালু করা হয়। ১৯৯৮সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ কলেজ অব্
ফিজিওথেরাপি একনেকে পাস করা হয়। কিন্তু আজও তা বাস্তবতার মুখ দেখেনি। ২০০৪ সালে
কলেজ অব্ ফিজিওথেরাপির প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২০১০সালে আবারও প্রকল্পটি পুনরায়
অর্থ বরাদ্দসহ চালু করে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু অজানা কারণে আজও কলেজটি প্রতিষ্ঠা
করা সম্ভব হয়নি। সরকারীভাবে ২০১২ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সারাদেশের জেলা ও উপজেলা
পর্যায়ে ১০৩টি প্রতিবন্ধী সাহায্য ও সেবা কেন্দ্রে প্রায় ২০৬জন ফিজিওথেরাপি
চিকিৎসককে নিয়োগ প্রদান করা হয়। ২০১২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদের
অধীনে বিএইচপিআই,সিআরপিতে ফিজিওথেরাপিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি চালু করা হয়। বিশিষ্ট
অনুজীব বিজ্ঞানী মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আনোয়ার হোসেনের ঐকান্তিক
সহযোগিতায় ২০১৮সালে সরকারিভাবে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য
বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন বিভাগের যাত্রা শুরু হয় এবং একই বছর
০৫ বছর মেয়াদি ব্যচেলর অব্ ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু করা হয়। ২০২১সালে একই বিভাগে
১০টি বিশেষায়িত ইউনিটে ০২বছর মেয়াদি মাস্টার্স অব ফিজিওথেরাপি কোর্স চালু করা হয়।
২০১৮ সাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকগণ এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রিতে
ভর্তির অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৮ সালে জাতির জনকের কণ্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী
শেখ হাসিনা ও তার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ হোসেন (পুতুল) এর ঐকান্তিক সহযোগিতায়
বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন মহান জাতীয় সংসদে পাস হয়। কাউন্সিলের আইন
অনুযায়ী ফিজিওথেরাপিতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ০৫ বছর মেয়াদি ব্যচেলর ডিগ্রিধারীকে
ফিজিওথেরাপিস্ট হিসেবে গন্য করা হয়।
দিন দিন দেশে বেড়েই চলেছে ফিজিওথেরাপি ও
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের গুরুত্ব। করোনার মত মহামারির সময়েও কোভিডে আক্রান্ত
পেশেন্টদের দ্রুত সুস্থ্য হতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকগণ।
এছাড়াও লং কোভিডে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন এই
পেশার সাথে সংশ্লিষ্টরা।আমাদের দেশে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রসার বিশ্বের
উন্নত দেশের মত নয়। বলতে গেলে এদেশের অধিকাংশ মানুষের এ বিষয়ে তেমন কোন স্বচ্ছ
ধারণাই নেই।
এবার জেনে নিই নার্সিং পেশা সম্পর্কে, নার্সিং একটি মহৎ ও মানব
ইতিহাসের পুরাতন পেশাগুলোর মধ্যে অন্যতম।অনেকেই মানুষের সেবামূলক কাজে আত্মনিয়োগ
করতে চান। এমনই সেবামূলক এক পেশা হচ্ছে নার্সিং। এই পেশায় একদিকে যেমন মানুষের সেবা
করা যায়, তেমনি ভবিষ্যৎ ও উজ্জ্বল। দেশে এখন প্রায় সব জেলা-উপজেলা শহরগুলোতেই
সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। আরও হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে
প্রতিবছরই নার্সের প্রয়োজন হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানে নার্স নিয়োগ করে বাংলাদেশ
সরকারের সেবা পরিদপ্তর।নার্সিং পেশাটি একটি মহৎ পেশা। কাজটিও আনন্দের। একজন নার্সকে
সাধারণত চিকিৎসকের নানা কাজের সহকারী হিসেবে হাসপাতাল বা ক্লিনিকের আউটডোর ও
ইনডোর, অপারেশন থিয়েটারে কাজ করতে হয়। এ ছাড়া রোগীকে ওষুধ খেতে সহায়তা করাসহ
নানাভাবে সেবা করারও কাজ করতে হয়। বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল থেকে জানা গেছে,
বর্তমানে দেশে তো বটেই, বিদেশেও নার্সিং পেশার দক্ষ ও অভিজ্ঞ লোকের চাহিদা রয়েছে
ব্যাপক। বিশেষ করে মালয়েশিয়া, কাতার, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে। তাই এ
পেশায় বর্তমানে যেমন রয়েছে সম্মান, তেমনি রয়েছে সম্ভাবনা। এখানেও অন্যান্য চাকরির
মতো ভালো বেতন ও অন্যান্য সুবিধার পাশাপাশি পদোন্নতির ব্যবস্থা আছে। দক্ষতা ও
জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নার্স থেকে সিনিয়র স্টাফ নার্স ও সুপারিনটেনডেন্ট, নার্সিং
ট্রেনিং কলেজের প্রশিক্ষক হওয়া যায়। এ ছাড়া সরকারের সেবা পরিদপ্তরের উচ্চপদস্থ পদে
যেতে পারেন নার্সরা। বাংলাদেশে অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থীর ইচ্ছা থাকে সরকারি
মেডিকেল কলেজে পড়ার এবং একজন ভালো চিকিৎসক হবার।তবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা তীব্র
প্রতিযোগিতাপূর্ণ হওয়ায় ও আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ায় সে স্বপ্ন অনেক শিক্ষার্থীরই পূরণ
হয় না।তবে,ফিজিওথেরাপি ও নার্সিং এ দুটি পেশার মাধ্যমেও মানবসেবার মত মহৎ পেশায়
যুক্ত থাকা যায়।ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদেরকে উন্নত বিশ্বে বেশ সম্মান প্রদান করা হয়ে
থাকে।এটি স্বতন্ত্র একটি পেশা।ফিজিওথেরাপি সেবা প্রদানকারীরা ফিজিও ফিজিওথেরাপিস্ট
/শারীরিক চিকিৎসক নামেও পরিচিত। মাদার তেরেসার নাম শুনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া
যাবে না।তিনি আজীবন মানব সেবা করেছেন।মানবসেবায় যারা ব্রতী হতে চায় তারা নার্সিং
পেশাকে বেছে নিতে পারেন নির্দ্বিধায়।তাই মেডিকেলের বিকল্প হিসেবে একজন শিক্ষার্থী
চাইলে ভর্তি হতে পারেন যবিপ্রবির স্বাস্থ্য বিজ্ঞান অনুষদের এ দুটি বিশেষায়িত
বিভাগের যেকোনটিতে।মূলত, মানব সেবায় ফিজিওথেরাপি ও নার্সিং পেশার গুরুত্ব সারা
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও সমাদৃত। উল্লেখ্য, যবিপ্রবিই দেশের একমাত্র পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে সরাসরি এ দুটি বিভাগের শিক্ষা কার্যক্রম চালু আছে।


Comments
Post a Comment