Skip to main content

ছোট গল্প: রানুর ভ্রম (এক সন্দেহভিত্তিক অপরাধের পরিণতি)


গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদের তীব্রতায় ঝলমল করে ওঠে উত্তরপুর গ্রামের বিল-ঝিল,পুকুর-নদীর পানি।এই উত্তরপুর গ্রামেই মফিজ মিয়া তার পরিবারকে নিয়ে  বাস করেন। মফিজ মিয়ার একমাত্র নেশা ও পেশা মাছ ধরা। তাই প্রখর   রোদ্দুরেও যেন তার মাছ ধরতে যওয়ার আগ্রহের কমতি নেই।নেহাত শখের বসেই যে তিনি মাছ ধরেন  এমন নয় বরং এই মাছ বিক্রির টাকা দিয়েই চা

লাতে হয় তার সংসার।এটিই উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম মফিজের।মফিজ মিয়ার বউ রানু তার দুই কন্যা আর এক পুত্র সন্তানের দেখাশোনাসহ  তাদের সংসারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।

রানু বেশ সাংসারিক ও কর্মঠ মহিলা কিন্তু রাগী এবং বদমেজাজি ও বটে।
ইলিশের মৌসুমে মফিজ মিয়া পদ্মায় মাছ শিকারে যান।পদ্মায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায়  যা সে  বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতে পারেন এবং এই মৌসুমে তার সংসারে একটু শান্তি ফিরে আসে।অনেক টাকা আয় হয় তার ফলে বাড়িতে ভালো মন্দ বাজার করে নিয়ে যেতে পারেন তিনি। ইদানিং রানু লক্ষ্য করছে তার স্বামী কোথায় যেন যান এবং বেশ দেরী করেই বাসায় ফিরেন।সন্দেহের বশে একদিন সে মফিজ মিয়ার পিছু  পিছু যান আর দেখতে পান তার স্বামী লুকিয়ে লুকিয়ে একজন মহিলার সাথে কথা বলছে। সে পর নারীর সাথে নিজের স্বামীকে এমন গোপনে কথা বলতে দেখে  হতভম্ব হয়ে ফিরে আসে।এভাবে সে কিছুদিন তার স্বামীর ওপর নজর  রাখার পর জানতে পারে মাঝে মধ্যেই তার স্বামী ঐ মহিলার সাথে দেখা করেন এবং দীর্ঘসময় কথা বলেন।রানুর প্রচন্ড রাগ হয় তার স্বামীর ওপর।সে তাকে এতো ভালোবাসার পরও অন্য মহিলার সাথে মফিজ মিয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে এমনটি সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না।রানু অঝরে কাঁদতে থাকে।অনেক ভাবনার পর রানু সিদ্ধান্ত নেয় তার বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতক স্বামীকে সে হত্যা করবে।তিনি ফন্দি আঁটতে থাকেন।একসময় পরিকল্পনা করেন মফিজের  খাবারের সাথে  বিষ মিশিয়ে দিয়ে তাকে হত্যা করবেন তিনি।কিছুদিনের মধ্যে সুযোগ বুঝে মফিজ মিয়ার খাবারের সাথে গোপনে বিষ মিশিয়ে দিয়ে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন  রানু। এধরনের মৃত্তুকে পাড়া প্রতিবেশীরা স্বাভাবিকভাবে নেন না তারা পুলিশকে জানায়। পুলিশ আসলেন ময়নাতদন্তের জন্য।লুকিয়ে মফিজের সাথে কথা বলা সেই মেয়েটি মফিজ মিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে এলো।মফিজ মিয়াকে ঘিরে তার সন্তানেরা কান্না করছে আর রানু পাশে চুপ হয়ে বসে আছে।খবর পেয়ে মফিজ মিয়ার সাথে গোপনে দেখা করা সেই  মেয়েটি মফিজ মিয়ার বাড়িতে এসে হাজির হলো এবং তার পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে রানুর কাছে সকল ঘটনা খুলে বললো।মেয়েটি আর কেউ নয় মফিজ মিয়ার নিজের বোন জরিনা  যার উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে হয়েছে।সুন্দর চেহারায় মুগ্ধ হয়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের মন্ডল সাহেবের ছেলে সোহেল  জরিনাকে বিয়ে করে।কিন্তু মফিজ মিয়া অত্যন্ত গরীব হওয়ায় তাকে শর্ত দেয়া হয় তার বোন জরিনাকে বিয়ের পর বোনের পরিচয় যেন সে না দেয় ও বোনের সাথে যেন কোনরকমের  সম্পর্ক না রাখে।
বিয়ের পর তাই জরিনা লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসত।এসব ঘটনা শোনার পর রানুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।সে শোকে পাথরের ন্যায় পড়ে থাকলো আর ভাবতে লাগলো কতবড় ভুলটায় না করে ফেলেছে ভুল নয় বরং পাপ!!মহাপাপ!! সে কান্নায় ভেঙে পড়ল ও আল্লাহর কাছে এই পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে লাগল।পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর আসল কারণ খুজে বের করলো এবং রানুকে অপরাধী হিসেবে শণাক্ত করল।রানুর যাবজ্জীবন কারাদন্ড  হলো।কিন্তু তার ছেলেমেয়েদেরকে কে দেখবে এই ভেবে সে আরও ভেঙে পড়ল ও কান্না করতে থাকলো।জরিনা তার ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিল। আর এব্যাপারে সে পুলিশের সাহায্য পেল।কিন্তু রানু নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারল না তার জীবনের বাকি দিনগুলো জেলের আধারেই তলিয়ে যায়। আর প্রচন্ড রকমের অনুশোচনায় দিনাতিপাত হতে থাকে রানুর। বুকভরা  কষ্ট নিয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে।এভাবেই তার জীবনের মেয়াদ ফুরিয়ে আসে এবং জেলের চারদেওয়ালের মাঝেই একসময় তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

✒️ফরিদ হাসান🖊

Comments

Popular posts from this blog

ফেসবুকের মতো সাইট তৈরি করলেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থীঃউদ্দেশ্য নিজ ক্যাম্পাসিয়ানদের একত্র করা

ফরিদ হাসান,ডিজিটাল কনটেন্ট রাইটার নিজ ক্যাম্পাস যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদেরকে এক ছাদের তলায় এনে স্বল্প সময়ে সবার সাথে সবার যোগাযোগকে সহজতর, প্রাণবন্ত ও দ্রুত করতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের আদলে একটি সাইট তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন যবিপ্রবির শিক্ষার্থী শেখ এজাজুল কবির।তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।সাইটটি তৈরির পর অনেকের  প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। ছবিঃশেখ এজাজুল কবির,শিক্ষার্থী যবিপ্রবি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে অবসরে নিজ উদ্যোগে তিলে তিলে নিজস্ব শ্রম, মেধা ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে প্রায় আট মাসের সাধনায় অত্যন্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাস্টিয়ান ডট এক্স ওয়াই জেড নামের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন এজাজুল কবির।সাইটটি মার্ন (MERN) স্ট্যাকে বিল্ড করা এবং কোডিংয়ের মাধ্যমে তৈরি। শেখ এজাজুর কবিরকে তার এই ওয়েবসাইট তৈরির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাস্টিয়ান ডট এক্স ওয়াই জেড সাইটটি আমার নিজেরই বানানো। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এবং স্টুডেন্টদেরকে একসাথে এক প্ল্যাটফর্মে আন...

সাস্টকে পিছনে ফেলে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে দেশসেরা জাস্ট

এলসেভিয়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশসেরা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা “এলসেভিয়ার” কর্তৃক স্কোপাস ডাটার সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করেছে যবিপ্রবি। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার এই তালিকা প্রকাশ করে।  এলসেভিয়ার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষেণাপত্রের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ বছর প্রকাশিত তালিকায় দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে প্রথম এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে নবম স্থানে অবস্থান করছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)।  যবিপ্রবির প্রকাশিত মোট গবেষণা পত্রের সংখ্যা প্রায় ৩০০ এরও অধিক। এছাড়া বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় যবিপ্রবির তিন শিক্ষক ও গবেষক স্থান পেয়েছেন। তারা হলেন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিঃ বিভাগের সহযো...

ম্যানুয়াল পেশী পরীক্ষার পদ্ধতি (Manual Muscle Testing Procedure)

ম্যানুয়াল পেশী পরীক্ষার পদ্ধতি (Manual Muscle Testing Procedure): ম্যানুয়াল পেশী পরীক্ষা (Manual Muscle Testing - MMT) হলো পেশীর শক্তি পরিমাপ করার একটি ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি। এটি নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা পেশীতে দুর্বলতা, পক্ষাঘাত, বা অন্যান্য পেশী সম্পর্কিত সমস্যা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। পদ্ধতি: রোগীর অবস্থান: রোগীকে পরীক্ষার জন্য আরামদায়ক অবস্থানে বসতে বা শুইতে হবে। পেশী নির্বাচন: পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট পেশী নির্বাচন করা হবে। স্কেলিং: পেশীর শক্তি 0 থেকে 5 পর্যন্ত স্কেলে পরিমাপ করা হয়: 0: কোন সংকোচন নেই 1: ট্রেস সংকোচন 2: gravity-eliminated পজিশনে পেশী সংকুচিত করতে পারে 3: against gravity পজিশনে পেশী সংকুচিত করতে পারে 4: against gravity + resistance পজিশনে পেশী সংকুচিত করতে পারে 5: normal strength পরীক্ষা: পরীক্ষাকারী রোগীর পেশী স্থির করবে। রোগীকে নির্দেশ দেওয়া হবে পেশী সর্বোচ্চভাবে সংকুচিত করার জন্য। পরীক্ষাকারী স্কেল অনুসারে পেশীর শক্তি নির্ধারণ করবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম: -টেপ -গনিয়োমিটার -রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড (ঐচ্ছিক) সতর্কতা: -পরীক্ষার সময় রোগীর ব্যথা ন...