লাতে হয় তার সংসার।এটিই উপার্জনের অন্যতম মাধ্যম মফিজের।মফিজ মিয়ার বউ রানু তার দুই কন্যা আর এক পুত্র সন্তানের দেখাশোনাসহ তাদের সংসারের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন।
রানু বেশ সাংসারিক ও কর্মঠ মহিলা কিন্তু রাগী এবং বদমেজাজি ও বটে।
ইলিশের মৌসুমে মফিজ মিয়া পদ্মায় মাছ শিকারে যান।পদ্মায় প্রচুর মাছ পাওয়া যায় যা সে বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতে পারেন এবং এই মৌসুমে তার সংসারে একটু শান্তি ফিরে আসে।অনেক টাকা আয় হয় তার ফলে বাড়িতে ভালো মন্দ বাজার করে নিয়ে যেতে পারেন তিনি। ইদানিং রানু লক্ষ্য করছে তার স্বামী কোথায় যেন যান এবং বেশ দেরী করেই বাসায় ফিরেন।সন্দেহের বশে একদিন সে মফিজ মিয়ার পিছু পিছু যান আর দেখতে পান তার স্বামী লুকিয়ে লুকিয়ে একজন মহিলার সাথে কথা বলছে। সে পর নারীর সাথে নিজের স্বামীকে এমন গোপনে কথা বলতে দেখে হতভম্ব হয়ে ফিরে আসে।এভাবে সে কিছুদিন তার স্বামীর ওপর নজর রাখার পর জানতে পারে মাঝে মধ্যেই তার স্বামী ঐ মহিলার সাথে দেখা করেন এবং দীর্ঘসময় কথা বলেন।রানুর প্রচন্ড রাগ হয় তার স্বামীর ওপর।সে তাকে এতো ভালোবাসার পরও অন্য মহিলার সাথে মফিজ মিয়ার সম্পর্ক থাকতে পারে এমনটি সে স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারে না।রানু অঝরে কাঁদতে থাকে।অনেক ভাবনার পর রানু সিদ্ধান্ত নেয় তার বেঈমান ও বিশ্বাসঘাতক স্বামীকে সে হত্যা করবে।তিনি ফন্দি আঁটতে থাকেন।একসময় পরিকল্পনা করেন মফিজের খাবারের সাথে বিষ মিশিয়ে দিয়ে তাকে হত্যা করবেন তিনি।কিছুদিনের মধ্যে সুযোগ বুঝে মফিজ মিয়ার খাবারের সাথে গোপনে বিষ মিশিয়ে দিয়ে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন রানু। এধরনের মৃত্তুকে পাড়া প্রতিবেশীরা স্বাভাবিকভাবে নেন না তারা পুলিশকে জানায়। পুলিশ আসলেন ময়নাতদন্তের জন্য।লুকিয়ে মফিজের সাথে কথা বলা সেই মেয়েটি মফিজ মিয়ার মৃত্যুর খবর পেয়ে ছুটে এলো।মফিজ মিয়াকে ঘিরে তার সন্তানেরা কান্না করছে আর রানু পাশে চুপ হয়ে বসে আছে।খবর পেয়ে মফিজ মিয়ার সাথে গোপনে দেখা করা সেই মেয়েটি মফিজ মিয়ার বাড়িতে এসে হাজির হলো এবং তার পরিচয় প্রদানের মাধ্যমে রানুর কাছে সকল ঘটনা খুলে বললো।মেয়েটি আর কেউ নয় মফিজ মিয়ার নিজের বোন জরিনা যার উচ্চবিত্ত পরিবারে বিয়ে হয়েছে।সুন্দর চেহারায় মুগ্ধ হয়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের মন্ডল সাহেবের ছেলে সোহেল জরিনাকে বিয়ে করে।কিন্তু মফিজ মিয়া অত্যন্ত গরীব হওয়ায় তাকে শর্ত দেয়া হয় তার বোন জরিনাকে বিয়ের পর বোনের পরিচয় যেন সে না দেয় ও বোনের সাথে যেন কোনরকমের সম্পর্ক না রাখে।
বিয়ের পর তাই জরিনা লুকিয়ে লুকিয়ে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে আসত।এসব ঘটনা শোনার পর রানুর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।সে শোকে পাথরের ন্যায় পড়ে থাকলো আর ভাবতে লাগলো কতবড় ভুলটায় না করে ফেলেছে ভুল নয় বরং পাপ!!মহাপাপ!! সে কান্নায় ভেঙে পড়ল ও আল্লাহর কাছে এই পাপের জন্য ক্ষমা চাইতে লাগল।পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে মৃত্যুর আসল কারণ খুজে বের করলো এবং রানুকে অপরাধী হিসেবে শণাক্ত করল।রানুর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হলো।কিন্তু তার ছেলেমেয়েদেরকে কে দেখবে এই ভেবে সে আরও ভেঙে পড়ল ও কান্না করতে থাকলো।জরিনা তার ভাইয়ের ছেলেমেয়েদের দেখাশোনা করার দায়িত্ব নিল। আর এব্যাপারে সে পুলিশের সাহায্য পেল।কিন্তু রানু নিজেকে কখনও ক্ষমা করতে পারল না তার জীবনের বাকি দিনগুলো জেলের আধারেই তলিয়ে যায়। আর প্রচন্ড রকমের অনুশোচনায় দিনাতিপাত হতে থাকে রানুর। বুকভরা কষ্ট নিয়ে ধুকে ধুকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে।এভাবেই তার জীবনের মেয়াদ ফুরিয়ে আসে এবং জেলের চারদেওয়ালের মাঝেই একসময় তার জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
✒️ফরিদ হাসান🖊

Comments
Post a Comment