Skip to main content

যিনি স্বপ্ন ফুটান রঙতুলিতে


যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর আর দশ জনের মতো ভেবেছিলেন পাস করে বের হয়ে সোনার হরিণ চাকরির পিছনে ছুটবেন হয়তো। করোনা মহামারির মধ্যে পরিবারে আর্থিক সাহায্য করতে চাকরী ও নিয়েছিলেন তিনি।  কিন্তু সৃষ্টিশীলতা তাকে পিছু ছাড়েনি। চাকরীর ধরাবাধা নিয়ম তাকে বশ করতে পারে নি। মনকে প্রাধান্য দিয়ে চাকরী ছেড়ে স্বপ্নের পোর্টেট, চারকোল একে দিন কাটাচ্ছেন এই স্বপ্নচারী। 


তৃতীয় শ্রেনিতে বাবার কিনে দেওয়া ড্রইংবোর্ড আর রঙতুলিতেই দীর্ঘ দুই দশক ধরে পোর্টেট, চারকোল একে যাচ্ছেন তিনি। শহরের অনেক দেয়ালে তার আঁকাবাঁকা রঙতুলির শোভা পেতে দেখা যায়। এগুলো পথচারীদের ও আর্কষন করে। সম্প্রতি তার আঁকা বেশ কিছু চারকোল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন তিনি। যা মন কাড়ে সকলের।  পাচ্ছেন ভূয়সী প্রশংসা ও। 


বলছিলাম বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল শহর যশোরে বেড়ে ওটা যবিপ্রবি'র রসায়ন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী রাশেদ খানের কথা। রাশেদ খান যশোরের মিউনিসিপ্যাল প্রিপারেটরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করেন। যবিপ্রবির রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করে নিচ্ছেন স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও। 


খান বলেন, করোনাকালীন লকডাউনের সময়গুলোতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার প্রধান মাধ্যম ছিলো ছবি আঁকা। আর ছবি আঁকার মাধ্যম হিসেবে তখন চারকোল মিডিয়ামই বেছে নিয়েছিলাম। আর আমি সাধারনত বিভিন্ন মিডিয়ামে এক্সপেরিমেন্ট করতে ভালোবাসি। কোন মিডিয়াম কাগজের ওপর কেমন ইফেক্ট দেয়, এগুলো নিয়ে পরীক্ষা চালাই। একজন সংগীত শিল্পীর কাছে যেমন একটি সপ্তকের ১২টি স্বর হলো তার শিল্পসাধনার প্রধান উপাদান, তেমনি একজন চিত্রশিল্পী হিসেবে একটুকরো পোড়া 'কাঠকয়লা' আমার শিল্প সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান। পেন্সিল, ওয়াটার কালার, এক্রেলিক, মিক্স মিডিয়া, ইঙ্ক পেন, প্যাস্টেল এসবের মধ্যে চারকোলটাই আমার কাছে একান্তই নিজের বলে মনে হয়৷

নতুন ভাবে ড্রইং এবং পেইন্টিং শেখার আগ্রহ তৈরি হয় স্নাতকের পর থেকে। ফাইন আর্টস এর বিভিন্ন বই অনলাইনে পড়তে থাকি, পোট্রের্ট, ফিগারেটিভ ড্রয়িং প্রাক্টিস করতে থাকি৷লাইট, শ্যাডো, কন্ট্রাস্ট, ভ্যালু, পার্সপেক্টিভ ড্রয়িং সম্পর্কে কিছুটা ধারনা লাভ করি৷সংগীত, চারুশিল্প এগুলো সাধারণত গুরুমুখী বিদ্যা। তবে এই ফেসবুক,ইউটিউব পিন্টারেস্ট আর ওয়েবসাইটের যুগে কোনো কিছু শেখাই খুব বেশি কঠিন না, শুধু শেখার আগ্রহটা থাকলেই চলে।


অন্য দশ জনের মতোই স্কুলেই তার আঁকাআঁকির হাতেখড়ি হয়েছিল।  পেয়েছিলেন মা-বাবার সম্পূর্ণ উৎসাহ। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ডিসিপ্লিনে সুযোগ পেয়েও ভর্তি না হতে পারার আক্ষেপ ও বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। খান বলেন, আমার স্পষ্ট মনে আছে,  তৃতীয় শ্রেনীতে থাকতে বাবা বিশাল বড় একটা ড্রইংবোর্ড আর রঙতুলি কিনে এনেছিলেন ছেলের ছবি আঁকার জন্য।  আঠারো বছরের পুরোনো ওই বোর্ডটা আমি এখনো ব্যবহার করছি! আসলে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অধ্যায়নের সুযোগ এসেছিলো এডমিশনের সময়ে, খুবির চারুকলা ডিসিপ্লিনে মেরিট লিস্টে থেকেও ভর্তি হতে পারিনি অনেকগুলো কারনে৷ অপ্রাপ্তির দীর্ঘ তালিকায় ওটা সারাজীবনই উপরের দিকে থাকবে৷ছাত্র হিসেবে আমি ছোটবেলা থেকেই মিডিওকেয়ার, আর রসায়নে পড়ার মত মেধাবী আমি ছিলাম না। তবু চেষ্টা করলে সবই সম্ভব।


এই শিল্লী তার কাজের মাধ্যমে রেখে যেতে চান একক বৈশিষ্ট্য।  গুরুর অনুসরণ করতে রাজি হলে অনুকরণে তিনি বিশ্বাসী নন। বলেন, শিল্প সৃষ্টির প্রধান উপাদান আত্মোপলব্ধি; আমার আঁকা অধিকাংশ ছবিগুলোর মধ্যে কোনো সৃজনশীলতা নেই। একজন গায়কের গান শেখার শুরুটা হয় গুরুকে অনুকরণ করে।  শিক্ষা লাভ হয়ে গেলে অনুকরণ করলে সেটা হবে 'নকল'। তেমনি লিওনার্দ্যোর বিখ্যাত তৈলচিত্র 'মোনালিসা' আমি এঁকেছি কাঠকয়লায়; হয়তো মিডিয়াম বদলের মাধ্যমে ক্রিয়েটিভিটি দেখিয়েছি, কিন্তু আমার কাঠকয়লার মোনালিসা যত জীবন্তই হোক না কেন সেটা নকল। ছবি আঁকার কৌশলগুলো আয়ত্ত করে, নিজের বোধ থেকে, আত্মোপলব্ধি থেকে কোনোকিছু আঁকলে সেটা হবে আমার সৃজনশীলতা। আমার ছবি৷ 

প্রদর্শনীর কথা জানতে চাইলে খান বলেন, এমন প্রশ্নে আমি সাধারনত নির্লিপ্ত থাকি।  কারন ওই আত্মোপলব্ধি আর সমাজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে নিজের স্বকীয়তাকে পুঁজি করে যখন ছবি আঁকা শুরু করবো, তখন আমার ভাবনায় আসবে 'এক্সিবিশন' শব্দটা। আমি ভাগ্যবান যে, অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী পেয়েছি যারা আমার আঁকা ছবিগুলোর প্রশংসা করে৷আমাকে উজ্জ্বিবিত করে, উৎসাহ অনুপ্রেরণা জোগায়। এবং মূলত তাদের কারনেই আমার এই নতুন পথ চলা।  

করোও সাথে প্রতিযোগীতা নয়।  একক সৃষ্টি দিয়ে এগিয়ে যেতে চান এই কারুশিল্পী। খান শুধু কারুশিল্পীই নন তিনি একাধারে গবেষণার কাজ ও চালিয়ে যাচ্ছেন।   ভালোবাসেন সাহিত্য কে ও। বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রফেশনাল শিল্পী হিসেবে সার্ভাইভ করা অত্যন্ত কঠিন। সে হোক কারু, চিত্র কিংবা সংগীত শিল্পী।  আর আমার তো এই বিষয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রিও নাই,  কিংবা কোনো কমিউনিটিতেও যুক্ত নই। আমার জন্য আরো কঠিন। প্রতিযোগীতার মনোভাব মানুসিক শান্তি নষ্ট করে৷কারো সাথে তাই আমার প্রতিযোগীতা নেই। আর আমি একজন রসায়নের ছাত্র, আমি গবেষণাও পছন্দ করি৷ রসায়ন বিভাগের ল্যাব এবং আমার আর্ট স্টুডিও; দুইটাই আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং এবং সমানভাবে গুরত্বপূর্ণ।


লেখাঃরুহুল আমিন,শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক, যবিপ্রবি 

Comments

Popular posts from this blog

ফেসবুকের মতো সাইট তৈরি করলেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থীঃউদ্দেশ্য নিজ ক্যাম্পাসিয়ানদের একত্র করা

ফরিদ হাসান,ডিজিটাল কনটেন্ট রাইটার নিজ ক্যাম্পাস যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদেরকে এক ছাদের তলায় এনে স্বল্প সময়ে সবার সাথে সবার যোগাযোগকে সহজতর, প্রাণবন্ত ও দ্রুত করতে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের আদলে একটি সাইট তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন যবিপ্রবির শিক্ষার্থী শেখ এজাজুল কবির।তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।সাইটটি তৈরির পর অনেকের  প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি। ছবিঃশেখ এজাজুল কবির,শিক্ষার্থী যবিপ্রবি পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে অবসরে নিজ উদ্যোগে তিলে তিলে নিজস্ব শ্রম, মেধা ও প্রজ্ঞার সমন্বয়ে প্রায় আট মাসের সাধনায় অত্যন্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জাস্টিয়ান ডট এক্স ওয়াই জেড নামের একটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছেন এজাজুল কবির।সাইটটি মার্ন (MERN) স্ট্যাকে বিল্ড করা এবং কোডিংয়ের মাধ্যমে তৈরি। শেখ এজাজুর কবিরকে তার এই ওয়েবসাইট তৈরির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, জাস্টিয়ান ডট এক্স ওয়াই জেড সাইটটি আমার নিজেরই বানানো। এটা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই এসোসিয়েশন এবং স্টুডেন্টদেরকে একসাথে এক প্ল্যাটফর্মে আন...

সাস্টকে পিছনে ফেলে বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে দেশসেরা জাস্ট

এলসেভিয়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশসেরা যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। বিশ্বের প্রথম সারির চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক প্রকাশনা নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা “এলসেভিয়ার” কর্তৃক স্কোপাস ডাটার সর্বশেষ র‌্যাঙ্কিংয়ে দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানে অবস্থান করেছে যবিপ্রবি। সম্প্রতি নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক চিকিৎসা ও বিজ্ঞান বিষয়ক নিবন্ধ প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার এই তালিকা প্রকাশ করে।  এলসেভিয়ার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত গবেষেণাপত্রের উপর ভিত্তি করে বিশ্বের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ বছর প্রকাশিত তালিকায় দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে প্রথম এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর মধ্যে নবম স্থানে অবস্থান করছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)।  যবিপ্রবির প্রকাশিত মোট গবেষণা পত্রের সংখ্যা প্রায় ৩০০ এরও অধিক। এছাড়া বিশ্বখ্যাত গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা এলসেভিয়ার বিশ্বসেরা ২ শতাংশ গবেষকের তালিকায় যবিপ্রবির তিন শিক্ষক ও গবেষক স্থান পেয়েছেন। তারা হলেন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিঃ বিভাগের সহযো...

ম্যানুয়াল পেশী পরীক্ষার পদ্ধতি (Manual Muscle Testing Procedure)

ম্যানুয়াল পেশী পরীক্ষার পদ্ধতি (Manual Muscle Testing Procedure): ম্যানুয়াল পেশী পরীক্ষা (Manual Muscle Testing - MMT) হলো পেশীর শক্তি পরিমাপ করার একটি ক্লিনিক্যাল পদ্ধতি। এটি নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা পেশীতে দুর্বলতা, পক্ষাঘাত, বা অন্যান্য পেশী সম্পর্কিত সমস্যা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। পদ্ধতি: রোগীর অবস্থান: রোগীকে পরীক্ষার জন্য আরামদায়ক অবস্থানে বসতে বা শুইতে হবে। পেশী নির্বাচন: পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট পেশী নির্বাচন করা হবে। স্কেলিং: পেশীর শক্তি 0 থেকে 5 পর্যন্ত স্কেলে পরিমাপ করা হয়: 0: কোন সংকোচন নেই 1: ট্রেস সংকোচন 2: gravity-eliminated পজিশনে পেশী সংকুচিত করতে পারে 3: against gravity পজিশনে পেশী সংকুচিত করতে পারে 4: against gravity + resistance পজিশনে পেশী সংকুচিত করতে পারে 5: normal strength পরীক্ষা: পরীক্ষাকারী রোগীর পেশী স্থির করবে। রোগীকে নির্দেশ দেওয়া হবে পেশী সর্বোচ্চভাবে সংকুচিত করার জন্য। পরীক্ষাকারী স্কেল অনুসারে পেশীর শক্তি নির্ধারণ করবে। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম: -টেপ -গনিয়োমিটার -রেজিস্ট্যান্স ব্যান্ড (ঐচ্ছিক) সতর্কতা: -পরীক্ষার সময় রোগীর ব্যথা ন...